গত নয়টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারীর অংশগ্রহণ দেখছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে প্রথম নারী সাংসদ নির্বাচিত হন তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৯৭৯ সালে। এরপর প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনেই কমবেশি নারী প্রতিদ্বন্দ্বীরা বিজয়ী হয়েছেন। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অতীতের যেকোনও সময়ের চেয়ে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নারী প্রাথী জয় লাভ করেছেন। যেখানে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ মোট ২২ জন নারী ভোটে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন।
বিজয়ী ২২ জন নারী প্রার্থীর মধ্যে ১৯ জনই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত। দুজন জাতীয় পার্টি ও একজন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী বিজয়ী নারীরা:
গোপালগঞ্জ-৩ : এ আসন থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ২ লাখ ২৯ হাজার ৫৩৯ ভোট। তার নিকটতম বিএনপির এস এম জিলানী পেয়েছেন মাত্র ১২৩ ভোট।
রংপুর-৬ : এ আসনে বর্তমান সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী মহাজোট প্রার্থী নৌকা প্রতীকে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৪২৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী সাইফুল ইসলাম পান ২৪ হাজার ৫৩ ভোট।
গাইবান্ধা-২ : এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মাহাবুব আরা বেগম গিনি ১ লক্ষ ৮৯ হাজার ৬১৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মো. আব্দুর রশীদ সরকার পেয়েছেন ৬৮ হাজার ৬৭০ ভোট।
শেরপুর-২ : বেগম মতিয়া চৌধুরী (নৌকা) ৩ লাখ ৪৪২ ভোট পেয়ে বিজয়ী। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ফাহিম চৌধুরী (ধানের শীষ) পেয়েছেন ৭ হাজার ৬৫২ ভোট।
নেত্রকোনা-৪ : রেবেকা মমিন নৌকা প্রতীকে ২ লাখ ৫ হাজার ৯৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তাহমিনা জামান শ্রাবনী (বিএনপির সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত লুৎফুজ্জামান বাবরের স্ত্রী) ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৩৮ হাজার ১০৫ ভোট।
সুনামগঞ্জ-২ : আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী জয়া সেন গুপ্তা (নৌকা প্রতীকে) এবার এ আসন থেকে ১ লাখ ২৪ হাজার ১৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী নাছির উদ্দিন চৌধুরী (ধানের শীষ) পেয়েছেন ৬৭ হাজার ৫৮৭ ভোট।
যশোর-৬ : আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইসমাত আরা সাদেক ১ লাখ ৫৪ হাজার ৫৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আবুল হোসেন আজাদ ৫ হাজার ৫৪৮ ভোট পেয়েছেন।
বাগেরহাট-৩ : আওয়ামী লীগের হাবিবুন নাহান তালুকদার ১ লাখ ৮৮ হাজার ৯০৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত। তার নিকটতম ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী জামায়াত নেতা আব্দুল ওয়াদুদ শেখ পান ১৩ হাজার ৪০৮ ভোট।
খুলনা-৩ : আওয়ামী লীগের প্রার্থী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান ১ লাখ ৩৪ হাজার ৮০৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম বিএনপির প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুল পান ২৩ হাজার ৬০৬ ভোট।
মানিকগঞ্জ-২ : এ আসনে (সিংগাইর, হরিরামপুর ও মানিকগঞ্জ সদরের ৩টি ইউনিয়ন) আওয়ামী লীগের মমতাজ বেগম ২ লাখ ৭৮ হাজার ৪৩৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মঈনুল ইসলাম খান শান্ত ধানের শীষে ভোট পেয়েছেন ৫০ হাজার ৩৪ ভোট।
মুন্সিগঞ্জ-২ : সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি নৌকা প্রতীকে ২ লাখ ১৫ হাজার ৩৮৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত। তার নিকটতম বিএনপি প্রার্থী মিজানুর রহমান সিনহা পেয়েছেন ১৪ হাজার ৬৫ ভোট।
ঢাকা-১৮ : এ আসন থেকে (সিটির ১, ১৭, ৪৩, ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৪৭, ৪৮, ৪৯,৫০, ৫১, ৫২, ৫৩, ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড ও বিমানবন্দর এলাকা) নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন সাহারা খাতুন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন তিনি।
গাজীপুর-৪ : আওয়ামী লীগের সিমিন হোসেন রিমি ২ লাখ ৩ হাজার ৩২৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী। বিএনপির শাহ রিয়াজুল হান্নান পেয়েছেন ১৮ হাজার ৫২৮ ভোট।
গাজীপুর-৫ : আওয়ামী লীগের মেহের আফরোজ চুমকি ২ লাখ ৭ হাজার ৬৯৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী। বিএনপির একে ফজলুল হক খান মিলন পেয়েছেন ২৭ হাজার ৯৭৬ ভোট।
কুমিল্লা-২ : এ আসনে (হোমনা-তিতাস) আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সেলিমা আহমেদ মেরী নৌকা প্রতীকে জয়ী হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৫৬৯ ভোট। আর তার নিকটতম প্রতিন্দ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন পেয়েছেন ২০ হাজার ১৫৬ ভোট।
চাঁদপুর-৩ : আসনে (চাঁদপুর সদর-হাইমচর) বেসরকারি ফলে নির্বাচিত হয়েছেন ডা. দীপু মনি। নৌকার প্রতীক নিয়ে সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেয়েছেন ৩,০৬,৮৯৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ ফরিদ আহমেদ ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৩৫,৮০২ ভোট। দীপু মনি ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের জয়লাভের পর বাংলাদেশে প্রথম মহিলা পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন।
নোয়াখালী-৬ : আওয়ামী লীগের আয়শা ফেরদাউস (নৌকা প্রতীকে) ২ লাখ ১০ হাজার ১৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ফজলুল আজিম (ধানের শীষ) পেয়েছেন ৪ হাজার ৭১৫ ভোট।
কক্সবাজার-৪ : এ আসনে (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাহিনা আক্তার চৌধুরী (বর্তমান সাংসদ আব্দুর রহমান বদির স্ত্রী) ২ লাখ ২ হাজার ১৮০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৯৫৭ ভোট।
ফরিদপুর-২ : আওয়ামী লীগের সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ২ লাখ ১৯ হাজার ২০৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী। নিকটতম বিএনপির শামা ওবায়েদ রিংকু পেয়েছেন ১৪ হাজার ৮৮৫ ভোট।
ফেনী-১ : মহাজোটের জাসদ নেত্রী শিরীন আখতার ২ লাখ ৪ হাজার ২৫৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষের রফিকুল ইসলাম মজনু পেয়েছেন ২৫ হাজার ৪৯৪ ভোট।
ময়মনসিংহ-৪ : আসনে মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ লাঙ্গল প্রতীকে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৭৭৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ঐক্যফ্রন্ট (বিএনপি) মো. আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ ১ লাখ ৩ হাজার ৭৫৩ পেয়েছেন ভোট।
বরিশাল-৬ : জাতীয় পার্টি লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী নাসরিন জাহান রত্না এ আসন থেকে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৩৯৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আবুল হোসেন খান পেয়েছেন ১৩ হাজার ৬৫৯ ভোট।
উল্লেখ্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে মোট ১০ জন নারী প্রার্থীকে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন দিয়েছিল বিএনপি। এর মধ্যে রংপুর-৩ : রিটা রহমান, নাটোর-১ : কামরুন্নাহার, নাটোর-২ : সাবিনা ইয়াসিমন ছবি, নীলফামারী-৪ : বেবী নাজনীন, সিরাজগঞ্জ-১ : রুমানা মোরশেদ কনকচাঁপা, ঝালকাঠি-২ : জেবা আমিন খান, শেরপুর-১ : ডা. সানসিলা জেবরিন, নেত্রকোনা-৪ : আসনে তাহমিনা জামান, ফরিদপুর-২ : শামা ওবায়েদ ও কক্সবাজার-১ আসনে হাসিনা আহমেদ। তবে তাদের মধ্যে কেউই বিজয়ী হতে পারেননি।
অন্যদিকে দলের মনোনয়ন পেয়েও সিলেট-২ (বিশ্বনাথ, উসমানী নগর ও বালাগঞ্জ) আসনে বিএনপির প্রার্থী নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারেননি। আরপিও অনুযায়ী সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার তিন বছর পর সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হওয়ার বিধান থাকলেও তাহসিনা রুশদীর লুনা ৬ মাস আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদ থেকে অব্যাহতি নেয়ায় তার মনোনয়নপত্রের বৈধতা স্থগিত করেন আপিল বিভাগ।
COMMENTS